শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা  জানান, চলতি মাসেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে। দুই হাজারের বেশি স্কুল-কলেজ এবং আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে।

বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এরপরই দেয়া হবে চূড়ান্ত ঘোষণা। চলতি মাসেই এ ঘোষণা আসছে বলে জানা গেছে। এমপিও হলো মান্থলি পে-অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ওই প্রতিষ্ঠানের বদলে সরকার পরিশোধ করে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরীন রোববার বলেন, ‘নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা আমরা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছি। সেটি শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পরই ঘোষণা দেয়া হবে।’ কবে নাগাদ ঘোষণা আসতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। এখন কবে ঘোষণা দেয়া হবে তা নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত।’

নতুন করে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে সে প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি রাজি হননি। বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এই বরাদ্দ জুন মাসের আগেই খরচের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। না হলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাবে। সেদিক বিবেচনায় আশা করছি চলতি মাসেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে।’

দুই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এবার এমপিওভুক্ত করা হবে বলে আভাস দেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে।’ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সহায়তা করতে চার সদস্যের একটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়।

কমিটিকে সহায়তা করবে ব্যানবেইসের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. আবু তাহের খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্ত করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়।

২০১৯ সালে ২ হাজার ৬২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পর নতুন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের যে প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে, তাতে নতুন প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে চূড়ান্ত বাছাইয়ে ২ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাড়পত্র পায়। এরপর আবার ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ছয়টি এবং ১৪ নভেম্বর একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। আর এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য গত বছরের ২৯ মে সংশোধিত এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এমপিওভুক্তির জন্য তিনটি শর্ত দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার- এই তিন বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০ এবং পাসের হারে ৪০ নম্বর রাখা হয়েছে। আগের নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদের ওপর ২৫ নম্বর ছিল, যা সংশোধিত নীতিমালায় বাদ দেয়া হয়েছে। কোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম কতজন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, তা-ও নীতিমালায় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিকে শহরে ১২০ ও মফস্বলে ৯০, মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪২০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২২০ এবং ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে শহরে ৪৯০ ও মফস্বলে ৪২৫ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পাসের হার স্তরভেদে ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।

গত বছরের ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে যে বাজেট উপস্থাপন করেন, তাতে শিক্ষা খাতে ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়। পরে আরও ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়।

তথ্যসূত্র: নিউজবাংলা24